Powered By Blogger

Tuesday, April 23, 2019

উরুশ্চারণ


তা ধরুন, তখন বেলা বারোটা বেজে গেছে সবে । আমার বেডরুমের পাশেই রাস্তা ।

উত্তেজিত কথাবার্তা চলছে, একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক আর এক যুবকের মধ্যে ।
বৃদ্ধ বলছেন – তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম, কটা বাজে আর তুমি বলছো – বারাসাত । আমি লোকাল ধরবো তো বলি নি ।
বারাসাতই তো বলেছি ।

সময় আবার কোনো জায়গার নাম হয় নাকি? ইয়ার্কি পেয়েছো হে ছোকরা ?
ইয়ার্কি কেন, এখনও বলছি – বারাসাত, তবে দু মিনি পেরিয়ে গেছে ।
আমার হটাৎ দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ গেল । দেখি – বারোটা বেজে নয়।

চট্ করে ধরে ফেলে বললাম – ও দাদা, বারাসাত মানে- বারোটা সাত ।
যুবকটি বললো – আমি তো সেটাই বলেছি, বারাসাত ।
বৃদ্ধ বললেন – ঠিক আছে । এবার আমাকে টাইম জিজ্ঞেস করলে বলবো – নবান্ন ।
মানে ? – যুবকটি বললো ।
হুঁ হুঁ বাবা ! নবান্ন বুঝলে না ?
না ।
নটা বাহান্ন । এক্কেবারে আপিস টাইম । যত্তসব !

পথে ঘাটে


এট্টু এট্টু করে রিক্সা চড়া অভ্যেস করছি, ডাক্তারের পরামর্শেই । গাড্ডা বাঁচিয়ে চালাতে বললেও সব সময় ওটা করতে পারে না, চালকরা ।
একটু টান টান হয়ে বসতে হয়, তখন ।
তা, ফেরার সময় একটা অদ্ভূত দৃশ্য দেখলাম ।
একজন প্যান্ট সার্ট পরা লোক, কালী মন্দিরের সামনে কান ধরে ওঠবোস করে বিড়বিড় করে কি সব বলছে ।
রতনকে দাঁড়াতে বললাম এই দেখে ।
বললাম্ – এই রকম ভাবে কালীকে ভক্তি করতে কাউকে দেখিনি , বেশ নতুন লাগলো।
ইতি উতি চেয়ে জবাব এলো :- পুলিশে ধরাবেন না তো ?
মানে ?
কিছুই না, আমি একজন পকেটমার ।
আমি তো হাঁ ! সে ক্ষী ?
মানে, আজ হলো কি-------- একটা গলিতে দেখি একটা বেশ দামী গাড়ী দাঁড় করানো । জানলা গুলো খোলা । চারদিকে কেউ কোথাও নেই ।
তারপর ?
পেছনের সীটে দেখি একটা দামী চামড়ার মানি ব্যাগ পড়ে আছে !
আমার চোখ তখন বিরাট কড়াইয়ের মধ্যে রসে ডুবুডুবু একটা রসগোল্লার মত ।
তারপর ?
আর কি ! ইতি – উতি দেখে মানি ব্যাগ খুলে দেখি, থোক টাকা । সব কটা পাঁচশো টাকার নোট । নিয়ে নিয়ে মানি ব্যাগটা যেকে সেই রেখে দিলাম । বলা তো যায় না, অনেক অন্য কিছু থাকতে পারে, যা মালিকের কাছে দরকারী, আমার কাছে নয় ।
আপনি তো মহানুভব , তারপর ?
আড়ালে গুণে দেখি- ২০ টা পাঁচশো টাকার নোট ।
তারপর ?
আর কি ! পকেট মারার পর রোজ কোনো না কোনো কালী মন্দিরের সামনে এরকম কান ধরে ওঠবোস করি ।
এক মন্দিরে যান না তা হলে ?
পাগল নাকি ? সেই এরিয়ায় আর যাই না একমাস ধরে ।
কিন্তু ভদ্রলোকের তো ক্ষতি হয়ে গেল ।
দেখুন- যে ১০ / ১৫ লাখ টাকার গাড়ী চড়তে পারে, তার কাছে ১০ হাজার টাকা নস্যি! তাছাড়া, আমি গরীবের পকেট মারি না !
উত্তেজনায়, খানিকের জন্য দমবন্ধ হয়ে চোখ বন্ধ হয়ে গেছিল । খুলে দেখি লোকটা হাওয়া ।

দোকানদারি

এক মাড়োয়ারী ভদ্রলোকের বিশাল মুদির দোকান । একমাত্র ছেলে, গ্র্যাজুয়েট হয়েছে ।
দোকানে এসে দ্যাখে – এক খরিদ্দার বিশাল গালাগালি করছে , বাবাকে ডালের গুণমান নিয়ে ।
বাবা খালি হাতজোড় করে বসে আছে ।

ছেলে ফুঁসে উঠলেও কিছু বলতে পারছে না ।
খরিদ্দার চলে গেলে, বাবাকে জিজ্ঞেস করলে, উত্তর এলো – খরিদ্দারের কাছ থেকে খালি নিবি, দিবি না কিছুই ।
টাকা বা গালাগালি হলেও নিবি, দিবি না কিছুতেই ।

ইলিশ এবং...



আজকাল মনটা ঠিক জুতের থাকে না নিতুর । এককালে তার ভাল নাম ছিল – নিত্যানন্দ দাস।

সেই নামে কেউ ডাকত না গ্রামে ! মুনিষ খেটে সংসার চলত তার । অন্তত দুবেলা দু মুঠো ভাত জুটে যেত ।
ছেলে পুলে না থাকাতে গৌরীর একটু খেদ ছিল না যে তা নয়, তবে নিতু তার বৌকে বলেছিল – ভগবান যা করেন, ভালর জন্যই করে । ছেলে পুলে হলে অনেক ফ্যাসাদ হত ! এই তো রোজগার !
সব গুবলেট করে দিল ওই ব্যাটা- গুলে জেলে ! নানা রকম মাছ বেচে শহরে । সাইকেলের কেরিয়ারে মাছের ঝুড়ি নিয়ে বেরোয় ভোরবেলা ।
নিতু একদিন মাঠে যেতে- দেখা গুলের সঙ্গে ।
বলেছিল – বাঃ । দেখি তোর মাছগুলো !
কিনবি তো?
নিশ্চয় ।
গুলে, ঝুড়ির ওপরের প্ল্যাসটিক খুলে দেখাল নিতুকে ।
ইলিশ দেখিয়ে বলল নিতু – কত রে গুলে?
ইঃ , লবাবপুত্তুর ! হাজার টাকা কেজির মাছ খাবে ব্যাটা ! খ্যামতা আছে? বেকার সময় নষ্ট ! যা, গ্রামের পাশে নদীতে গিয়ে ধর ইলিশ । ব্যাটার ইদিক নাই –উদিক আছে ! হুঃ !
নিতুর খুব মন খারাপ হয়ে গেছিল । ইলিশের সর্ষে বাটা ঝোল সে অনেকদিন আগে খেয়েছিল, গ্রামের মহাজনের বাড়ীতে ! লোকটি বেশ ভাল ছিল । নাতির অন্নপ্রাশনে গ্রাম শুদ্ধু লোককে যেচে খাইয়েছিল সর্ষে ইলিশ আর ভেটকি মাছের পাতুরি ।
ফুরুৎ করে একদিন ভবসাগর পার মহাজন !
গৌরীকে বলে কুচো মাছের সর্ষে বাটা ঝাল খেত নিতু ! গৌরীর রান্নার হাত ছিল - একেবারে সাক্ষাৎ মা অন্নপূর্ণার মত ।
সেদিন অপমানের পর নদীতে তার ছোট জালটা ফেলল । কিছু একটা জুটবেই !
কপাল খারাপ ! অনেকদিন অভ্যাস নেই ! জাল ঘুরিয়ে ফেলতে গিয়ে পা হড়কে গেল ‍! নিতু আর কিছু দেখতে পেল না !
তারপর থেকেই – গ্রামের এই বটগাছে বসে পা দোলায় !
অবাক হয়ে দেখে – মানুষের যখন দিন তখন নিতুদের রাত ! আর রাত হলেই ভোর হয় নিতুদের !
পা দুলিয়ে অনেকবার গুলের মাছের ঝুপড়ি ফেলে দিয়েছে ! ব্যাটা গুলে- প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও, পরে বুঝে খুব ভয় পেয়েছিল । আর তো অন্য রাস্তা নেই গ্রাম থেকে বেরোবার ! তাই নিতুর সাথে একটা রফা করেছিল গুলে !
গাছের দিকে তাকিয়ে বলেছিল – তুই যদি নিতু হোস, তবে একটা গাছের ডাল নাড়া !
নিতু ডাল নাড়াতেই , গুলে বলেছিল –তোকে মাসে দুটো করে ইলিশ দেবো ! গৌরীকে বলব- তোকে সর্ষে ইলিশের সাথে ভাত দেবে । আর রোজ চুনো মাছ দেবো ! ভাতের সাথে চুনো মাছের চচ্চড়ি খাবি ! গৌরী থালাটা রেখে যাবে এখানে । তুই খাবি ! ঠিক আছে? আর জ্বালাবি না আমাকে !
গাছের ডালটা নাড়িয়ে দিল নিতু !
এবারে আর একটা সমস্যা গজিয়ে গেল ! পাশের বেলগাছের ব্রহ্ম দৈত্য হারু ঠাকুর বলল – যে দিন ইলিশ হবে, সেদিন আমাকে ভাগ দিবি ! না হলে, তোকে একটা কেস দিয়ে ভূতেদের জেলে পাঠাব ! আমাকে সবাই ডরায় এখানে ।
অগত্যা মধুসূদন ! নিতু রাজী হল ।
এই করে রাত চলছে !
হঠাৎ ভূতেদের হেড অফিস থেকে কয়েকটা ভূত এল !
তাদের ফরমান – যত কারিয়া পিরেত, মামদো আর অন্যান্যরা আছে তাদের ভূত গণণা হবে !
ব্রহ্মদত্যি আপত্তি করলেন না ! কি আর করা ! ওরা সব নাম টাম লিখে নিয়ে গেল !
এখন শুধু অপেক্ষা, কবে লিস্ট বেরুবে !
যদি লিস্টে নাম না থাকে, তবে নিতুদের অন্য জায়গার শ্যাওড়া গাছে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হবে !
কোথায় পাবে গৌরীর হাতের রান্না !
মনটা কি ভাল থাকতে পারে নিতুর?

ভূতেরা


অনেকদিন পর বুকি ঘোষের রেশন দোকানে আড্ডা দিতে গেছিলাম । সেদিন ছিল, কৌশিকি অমাবস্যার দিন । বেচা- কেনা শেষ । অপু আর জীবন বসে ভূতের গল্প করছে ।

চেয়ার এগিয়ে দিল – অলোক । তক্ষুণি গরম গরম চা নিয়ে এলো মিন্টু । ও সব দোকানেই সকাল বিকেল চা বিক্রি করে বেড়ায়।
চায়ে চুমুক দিয়ে – গল্পের ভাবধারা বোঝার চেষ্টা করলাম । কৌশিকী অমাবস্যা তিথির জন্য, চারিদিকে সাজ সাজ রব ।
অমাবস্যা থেকে – বিষয়গুলো গোল গোল ঘুরে আড্ডায় এখন ভূতে এসে ঠেকেছে ।
তর্ক চলছে – বুকি আর অপুর মধ্যে । বুকির বক্তব্য:- ভূত- নাকি স্বরে কথা বলে না আর অপু বলছে – আলবাৎ বলে ।
আমাকে জিজ্ঞেস করলো ওরা । গম্ভীর হয়ে বললুম – আমি তো স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলি ! খোনা স্বরে তো কোনোদিন কথা বলি নি !
বুকি রেগে গিয়ে বললো – আপনি ভূত ? জানতাম না তো !
জানবে, কি করে হে ? গুহ্য তথ্যটা আমার বৌ ছাড়া, যে কেউ জানে না !
যাক্ !

তালে শুনুন – বুকি উবাচ !
ওই যে ডান দিকে বাঁধানো পুকুরটা দেখছেন – ওটা পঞ্চাশ বছর আগে বিরাট ছিল । বাবা আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়েছে সেই অন্ধকার থাকতে । মুখ ধুতে গেলাম – পুকুরে । ফিরে এসেই পড়তে বসতে হবে ।
দেখি, ওই ভোরে গণেশকাকু, জাল ফেলে মাছ ধরছে । মাছগুলো জাল থেকে বের করে পাশের ঝুড়িতে রাখতেই সেগুলো খালি মাছের কাঁটা হয়ে যাচ্ছে- নিজের চোখেই দেখলাম ।
আমি গণেশ কাকুকে বললাম:- দেখেছো কাকু কাণ্ডটা !
গণেশকাকু ভয়ডর হীন লোক ছিলেন । একটু তাকালেন – ঝুড়ির দিকে ।
তারপর

কে রে আমার মাছ খাচ্ছে? – গণেশ কাকুর চিৎকার ।
উত্তর এলো – আমি তোর অনাদি কাকা রে গণেশ । দু বছর আগে মারা গেছি, জানিস তো । আজ তুই মাছ ধরছিস দেখে কয়েকটা মাছ খেলাম । বহুদিন খাই নি । এখন পেট ভরেছে – চলে যাচ্ছি ।
কোনো খোনা স্বর ছিল না- বুকি ?
একদম না !
অপু বললো – বাতেলা আর মিথ্যে কথা !
কি রকম ? – আমার জিজ্ঞাসা ।
সন্ধেবেলা আমার মা, সেও প্রায় বছর পঞ্চাশ হবে, মাছ কাটছিল । আঁশ ছাড়িয়ে পাশে রাখতেই একটা কপাৎ করে আওয়াজ । এরকম বার দুয়েক হতেই মা তাকিয়ে দেখে – একটা কাটা মুণ্ডু ,গালে বিশাল দাড়ি, আরাম করে আঁশ গুলো খাচ্ছে শব্দ করে ।
মা একটা ঝাঁটার বাড়ি দিয়ে বললো – যা , ভাগ্ এখান থেকে !
কেঁমনে যাঁই মাঁ । পেঁট যেঁ ভঁরে নিঁ ।
অপু, তুমি নিজের কানে শুনেছো ? – আমার কৌতুহল ।

তবে আর বলছি কি ?
এরকম চলতো হয়তো, তবে আমার ফোনে রিং টোন বেজে উঠলো । স্ক্রিনে দেখলাম – আমার বৌ কল করেছে আমায় ।
বলো !

শোনো – তাড়াতাড়ি এসো তো !
কুট্টুর ( আমার নাতনী )খুব কেক খিদে পেয়েছে ! কিনে নিয়ে এসো তো ।
ফিরলাম বাড়িতে ।
কুট্টু বললো – দাদা তুই কি করে জানলি, আমার কেক খেতে ইচ্ছে করছে ? ( কুট্টু আমাকে আর তার দাদীকে ইয়ার বলে মনে করে ।)
কেন, তোর দাদী যে ফোন করে বলল আমায় !
বাজে কথা কেন বলো? আমি তোমায় ফোন করি নি !
কি যে বলো না ! এই দ্যাখো কল‌্ লিস্ট‌্ । দেখি কল্ লিস্টে্ আমার বৌয়ের কল্ নেই ।
ওনার ফোনেও আমার নং ছিল না !

ভ্রান্তিবিলাস


ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে, ভালো করে ব্যাগ হাতড়েও চাবিটা পেল না রিয়া ।
সব আছে, খালি চাবিটাই নেই । রাত আটটার সময়, চাবিওয়ালা কে পাওয়ার চেয়ে স্বয়ং ভগবানকে পাওয়া বোধহয় সহজ।
মা- বাবা পুরী গেছে বেড়াতে । রিয়ারও যাবার কথা, কিন্তু শেষ মুহূর্তে অফিসে একটা প্রজেক্ট এসে যাওয়াতে, আর যাওয়া হয় নি তার ।
মা, পই পই করে বলে গেছে- গ্যাস অন করলে, আগে রেগুলেটার বন্ধ করবি । তোর যা ভুলো মন ।
মায়ের এই সব দোষারোপ ভালো লাগে না রিয়ার ।
না হয় একদিন লন্ড্রি থেকে বাবার জামা কাপড় এনে আলমারি মনে করে , সামসাঙের বিশাল ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখেছিল !
মা যে, স্নানের সময় তোয়ালে ঘাড়ে করে সারা বাড়ি খোঁজে, তোয়ালে, তার বেলা?
খালি রিয়ারই দোষ?
তার বয়ে গেছে – রান্না করতে । দুপুরে অফিস ক্যানটিনে খেয়ে নেয় আর রাতে পাড়ার মোড় থেকে রুটি তরকারি আনে ।
সাতটা দিন এভাবেই চালিয়ে দেবে রিয়া, এটা ঠিকই করে রেখেছিল ।
সকালের চা পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি দিয়ে যায় । অত সকালে ভালো করে ঘুমই ভাঙে না রিয়ার । তবু উঠে দরজাটা খুলতে হয়, চায়ের জন্য ।
বিড়বিড় করেই যাচ্ছে, রিয়া । এখন কি করবে, ভেবেই পাচ্ছে না ।
পাশের বাড়ীর আন্টিকে ডাকবে?

নাঃ ! আজকেই মায়ের কাছে খবর যাবে ফোনে ।
সব কটা শত্তুর । সে যতই আদর করে আজকের ডিনারে তাকে নেমতন্ন করুক না কেন আন্টি !
সারাদিনের পরা সালোয়ার কামিজ ছেড়ে তো ফ্রেশ হতে হবে ।
সেটার কি হবে ? আবার কালকে অফিস যেতে হলে তো, এই একই সালোয়ার কামিজ পরতে হবে ।
মাগো ! গা শিরশির করছে ।
হটাৎ, মোবাইলে একটা ফোন । স্ক্রিনে দেখল- কল করেছে আন্টি !

এখন কি করবে রিয়া?
ফোনটা অ্যাকসেপ্ট করবে না বেজে যেতে দেবে? রিজেক্ট করলেই তো সেই আবার সন্দেহ । মেয়েটার কিছু হলো না তো, বা মোবাইল কি হারিয়ে ফেলল ?
মহা ঝামেলায় পড়া গেল ।
দোনো মনো করে ফোনটা তুলল ।
কি রে রিয়া, তুই কোথায়?
এই তো ফ্ল্যাটের সামনে ।
ফোন করতে কি হয়েছিল?
এক মিনিট দাঁড়া- আসছি । সকালে বেরুবার সময় ,ফ্ল্যাটের চাবিটা তো আমার কাছে রেখে গেছিলি, হারিয়ে যেতে পারে ভয়ে ।

বিড়ম্বনা



ওলাতে উঠেই ধড়াম্ করে দরজাটা বন্ধ করল বিরাজ । ওই ধড়াম‌্ শব্দের মধ্যেই রাগের ঝাঁজটা বুঝতে পারছিল অনীতা ।

ড্রাইভার, একটু রেগে বললো – দরজাটা আস্তে তো বন্ধ করতে পারতেন । ভেঙে গেলে তো দায় নেবেন না আপনারা ।
গড়িয়া থেকে- এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর । এতটা রাস্তা যেতে হবে, তাই সময় মিলবে- বিরাজের রাগ কমতে ।
অনীতা, চুপ করে বসে থেকে বন্ধ জানলার পাশে- রাস্তাটা দেখতে লাগলো ।
খানিক পরে, বিরাজ বললো – তুমি কি সত্যিই এম. এ. পাশ করেছো, ইংরেজি নিয়ে ?
অনীতার মুচকি হেসে জবাব – কোনো সন্দেহ আছে কি? তাহলে বিয়ের সময় না হয় শংসাপত্রটা দেখাতাম । একেবারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ মারা ।
শংসাপত্রটা আবার কি?

সার্টিফিকেট ।
মোটে সাতদিন হলো বিয়ে হয়েছে ওদের । এখন আত্মীয়দের বাড়ীতে খেয়ে বেড়ানোর পালা ।
বালুরঘাট সাকিন হলেও – অনীতার মা বাবা, রাজশাহীর ।
অনীতার জন্ম অবশ্য বালুরঘাটেই । দেখেশুনেই বিয়ে বিরাজের সাথে ।
অনীতা দেখতে ভারী সুন্দরী আর স্মার্ট । তাই- মা বাবার একমাত্র ছেলে বিরাজ আপত্তি করে নি। নিজেদের বারোশো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট ।

একটা নামকরা আইটি কোম্পানির প্রজেক্ট হেড ।
অনীতাও বালুরঘাট কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পাশ করে যাদবপুর থেকে এম.এ করেছে ইংরেজি নিয়েই । মার্কসও বেশ ভালো- ৬৭ % । নেট পরীক্ষায় পাশ করেছে ।
এখন অধ্যাপনা করবে না পিএইচডি করবে, সেটা নিয়ে ভাবার মধ্যেই এই বিয়ে ।
বিরাজ গোমড়া মুখে বললো – তুমি এত শিক্ষিতা, তাও তোমার বালুরঘাটের গাঁইয়া স্বভাব গেল না !

অনীতার কেন জানি না – হাসিটা সোডার মত ভুকভুকিয়ে উঠছে, ভেতরে।
মুখটা যথাসম্ভব গম্ভীর রেখে জিজ্ঞেস করলো – কি করেছি বা বলেছি আমি?
তুমি বারবার আমার মাসতুতো বোনকে ঝি বলেছো ?
ওমা ! ঝি বলবো কেন ?
হাজার বার বলেছো ।
আরে তার আগে তো ঠাকুর বলেছি । পুরোটা হলো – ঠাকুরঝি ।

থামো ! ঝি বলেছো, আবার ঠাকুর আগে বলে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করো না ।
ওমা, তুমি জানো না ?
কি?
শ্বশুরকে তো ঠাকুর বলে । আর ঝি হচ্ছে মেয়ে । মেসো তো আমার ঠাকুর, হাজার হোক মেসোশ্বশুর বলে কথা ! তাই তোমার মাসতুতো বোন আমার ঠাকুরঝি ।
বিরাজ বোধহয়, এবার নরম । তাও বললো – জানি না এসব । তবে যে ভারি কুলুঙ্গি বলছিলে ?
ওরে বাবারে, ওদের যে কাঠের কাঁচ দেওয়া আলমারিটা আছে,তারই এক কোণে একটা খোপে দেখলাম – একটা গণেশের মূর্তি আছে । তাই বলেছিলাম, কুলুঙ্গিটা একেবারে মাপমত হয়েছে, গণেশের মূর্তির সাথে ।
বিরাজ এবার হেসে বললো – এত পুরোনো বাংলা শিখলে কবে ?
ইচ্ছে থাকলেই শেখা যায় । কত যে বাংলা শব্দ এভাবে হারিয়ে গেল !

এবারে বিরাজ দরাজ দিল । সামনে একটা সিসিডি দেখে বললো – চলো, একটু কফি খেয়ে বাড়ীতে যাবো । এটার কোনো বাংলা আছে নাকি?
আছে তো ।
কি ?

কাপে কফি দে । যদিও , কাপকে আগে পেয়ালা বলতো ।
অনীতা জোরে গেয়ে উঠলো – ঠুন্ ঠুন্ পেয়ালা ।
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে । কারও নামের সাথে মিল থাকলে, সেটা অনিচ্ছাকৃত ।)