ড্রাইভার, একটু রেগে বললো – দরজাটা আস্তে তো বন্ধ করতে পারতেন । ভেঙে গেলে তো দায় নেবেন না আপনারা ।
গড়িয়া থেকে- এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর । এতটা রাস্তা যেতে হবে, তাই সময় মিলবে- বিরাজের রাগ কমতে ।
অনীতা, চুপ করে বসে থেকে বন্ধ জানলার পাশে- রাস্তাটা দেখতে লাগলো ।
খানিক পরে, বিরাজ বললো – তুমি কি সত্যিই এম. এ. পাশ করেছো, ইংরেজি নিয়ে ?
অনীতার মুচকি হেসে জবাব – কোনো সন্দেহ আছে কি? তাহলে বিয়ের সময় না হয় শংসাপত্রটা দেখাতাম । একেবারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপ মারা ।
শংসাপত্রটা আবার কি?
সার্টিফিকেট ।
মোটে সাতদিন হলো বিয়ে হয়েছে ওদের । এখন আত্মীয়দের বাড়ীতে খেয়ে বেড়ানোর পালা ।
বালুরঘাট সাকিন হলেও – অনীতার মা বাবা, রাজশাহীর ।
অনীতার জন্ম অবশ্য বালুরঘাটেই । দেখেশুনেই বিয়ে বিরাজের সাথে ।
অনীতা দেখতে ভারী সুন্দরী আর স্মার্ট । তাই- মা বাবার একমাত্র ছেলে বিরাজ আপত্তি করে নি। নিজেদের বারোশো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট ।
একটা নামকরা আইটি কোম্পানির প্রজেক্ট হেড ।
অনীতাও বালুরঘাট কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পাশ করে যাদবপুর থেকে এম.এ করেছে ইংরেজি নিয়েই । মার্কসও বেশ ভালো- ৬৭ % । নেট পরীক্ষায় পাশ করেছে ।
এখন অধ্যাপনা করবে না পিএইচডি করবে, সেটা নিয়ে ভাবার মধ্যেই এই বিয়ে ।
বিরাজ গোমড়া মুখে বললো – তুমি এত শিক্ষিতা, তাও তোমার বালুরঘাটের গাঁইয়া স্বভাব গেল না !
অনীতার কেন জানি না – হাসিটা সোডার মত ভুকভুকিয়ে উঠছে, ভেতরে।
মুখটা যথাসম্ভব গম্ভীর রেখে জিজ্ঞেস করলো – কি করেছি বা বলেছি আমি?
তুমি বারবার আমার মাসতুতো বোনকে ঝি বলেছো ?
ওমা ! ঝি বলবো কেন ?
হাজার বার বলেছো ।
আরে তার আগে তো ঠাকুর বলেছি । পুরোটা হলো – ঠাকুরঝি ।
থামো ! ঝি বলেছো, আবার ঠাকুর আগে বলে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করো না ।
ওমা, তুমি জানো না ?
কি?
শ্বশুরকে তো ঠাকুর বলে । আর ঝি হচ্ছে মেয়ে । মেসো তো আমার ঠাকুর, হাজার হোক মেসোশ্বশুর বলে কথা ! তাই তোমার মাসতুতো বোন আমার ঠাকুরঝি ।
বিরাজ বোধহয়, এবার নরম । তাও বললো – জানি না এসব । তবে যে ভারি কুলুঙ্গি বলছিলে ?
ওরে বাবারে, ওদের যে কাঠের কাঁচ দেওয়া আলমারিটা আছে,তারই এক কোণে একটা খোপে দেখলাম – একটা গণেশের মূর্তি আছে । তাই বলেছিলাম, কুলুঙ্গিটা একেবারে মাপমত হয়েছে, গণেশের মূর্তির সাথে ।
বিরাজ এবার হেসে বললো – এত পুরোনো বাংলা শিখলে কবে ?
ইচ্ছে থাকলেই শেখা যায় । কত যে বাংলা শব্দ এভাবে হারিয়ে গেল !
এবারে বিরাজ দরাজ দিল । সামনে একটা সিসিডি দেখে বললো – চলো, একটু কফি খেয়ে বাড়ীতে যাবো । এটার কোনো বাংলা আছে নাকি?
আছে তো ।
কি ?
কাপে কফি দে । যদিও , কাপকে আগে পেয়ালা বলতো ।
অনীতা জোরে গেয়ে উঠলো – ঠুন্ ঠুন্ পেয়ালা ।
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে । কারও নামের সাথে মিল থাকলে, সেটা অনিচ্ছাকৃত ।)